All Languages Bengali

বাংলাদেশে সন্তান জন্মের জন্য সেরা বার্থিং সেন্টার

বাংলাদেশে শান্ত পরিবেশে সন্তান জন্মদানের জন্য সেরা বার্থিং সেন্টারগুলি সম্পর্কে জানুন। সুবিধা, খরচ, বিমা কভারেজ এবং আরও অনেক কিছু। আজই আপনার পছন্দের সেন্টারটি বুক করুন!

বার্থিং সেন্টার বাংলাদেশ সন্তান জন্ম বাংলাদেশ প্রসবকালীন যত্ন বাংলাদেশ বাংলাদেশে হাসপাতাল vs বার্থিং সেন্টার ঘরোয়া প্রসব বার্থিং সেন্টার খরচ বার্থিং সেন্টার বুকিং নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা প্রাকৃতিক প্রসব midwife বাংলাদেশ

মা, শুনছেন তো! একটি বিশেষ পরিবেশে সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা ভাবছেন?

আরে বাহ! হাসপাতাল ছেড়ে কোনো বার্থিং সেন্টারে বাচ্চা ডেলিভারি করার কথা ভাবছেন বুঝি? চমৎকার! এটা তো একেবারেই নিজের সিদ্ধান্ত। আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে, ভাবলাম আপনার সাথে ভাগ করে নিই। চলুন, একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক, যাতে আপনি ভালো করে সব জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

১. বার্থিং সেন্টার কি আপনার জন্য সঠিক?

প্রথমেই বলি, বার্থিং সেন্টার কিন্তু সবার জন্য একরকম নয়। এখানে হাসপাতালের মতো সবসময় সবরকম সুবিধে হাতের কাছে পাবেন না। এটা অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশ, যেখানে আরও বেশি আপন করে যত্ন নেওয়া হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে কয়েকটা প্রশ্ন করুন:

১.১ হাসপাতালের মতো সব সুবিধা কি আপনার দরকার?

হাসপাতালে জরুরি সি-সেকশন থেকে শুরু করে বাচ্চাদের জন্য ইনটেনসিভ কেয়ারের মতো সব ব্যবস্থা থাকে। নিজের শারীরিক অবস্থাটা একটু ভেবে দেখুন – আপনার কি কোনো জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে? সাধারণত, বার্থিং সেন্টারগুলোয় কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রেগন্যান্সির ডেলিভারি করানো হয়। আপনার ডাক্তার যদি বলেন আপনার প্রেগন্যান্সিতে কোনো ঝুঁকি নেই, তবেই এখানে আসা ভালো। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে, তবে বার্থিং সেন্টার হয়তো আপনার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।

১.২ ব্যথা কমানো আপনার কাছে কতটা জরুরি?

বার্থিং সেন্টারগুলোতে কিন্তু ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন (Epidural) বা অন্য কড়া ওষুধ দেওয়ার সুযোগ খুব কম থাকে, বা থাকেই না। কিছু জায়গায় হয়তো অল্প ব্যথানাশক গ্যাস (Nitrous Oxide) পাওয়া যায়, কিন্তু আগে থেকে জেনে নেওয়া ভালো তারা ব্যথা কমানোর জন্য কী কী করতে পারে। ধরুন, আমার এক বান্ধবী বার্থিং সেন্টার বেছে নিয়েছিল, কিন্তু পরে ব্যথানাশক ইঞ্জেকশনের জন্য তাকে হাসপাতালে যেতে হয়, কারণ শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করে তার ব্যথা সহ্য হচ্ছিল না। এতে কিন্তু তার বিমার খরচ বেড়ে গিয়েছিল। এটা আমরা পরে আলোচনা করব। এখানে যোগাসন বা হালকা ব্যায়ামের সুযোগ থাকতে পারে, তবে ব্যথার তীব্রতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়।

১.৩ আপনার বিমা কি এটা কভার করবে?

এটা কিন্তু খুব জরুরি! অনেক জায়গায় (যেমন আমেরিকা) বিমা কোম্পানিগুলো বার্থিং সেন্টারের খরচ পুরোটা দেয় না, কারণ তাদের মনে হয় এখানে জরুরি অবস্থার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। তাই বার্থিং সেন্টার দেখার আগে আপনার বিমা কোম্পানির সাথে কথা বলে নিন – পরে অনেক ঝামেলা আর খরচ বাঁচবে। আমাদের দেশেও কিন্তু এখন অনেক হেলথ ইন্সুরেন্স পলিসি পাওয়া যায়, তাই আগে থেকে জেনে নেওয়াই ভালো। বিমা কোম্পানি বার্থিং সেন্টারের খরচ দেয় কিনা, তা জেনে রাখা দরকার। অনেক সময় দেখা যায়, বিমার নিয়মকানুন (policy) ভালোভাবে না জানার কারণে অনেক খরচ বেড়ে যায়।

২. নিজের পছন্দের জায়গা খুঁজুন: জায়গাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ!

একবার যদি মনে হয় বার্থিং সেন্টার আপনার জন্য ঠিক আছে, তখন একটু খোঁজখবর করা দরকার। এটা কিন্তু পাড়ার নতুন কফি শপ খোঁজার মতো নয়; খুব ভালো করে দেখে-শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

২.১ কাছাকাছি হওয়াই ভালো।

প্রসব বেদনা যে কোনো সময় শুরু হতে পারে। তখন রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না! চেষ্টা করুন আপনার বাড়ি থেকে বার্থিং সেন্টার যেন খুব বেশি দূরে না হয়, আর কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল থাকলে তো কথাই নেই। জরুরি অবস্থার জন্য দ্রুত হাসপাতালে যাওয়াটা সুবিধাজনক হবে।

২.২ হাসপাতালের সাথে যুক্ত সেন্টারগুলোতে ভরসা বেশি।

কিছু জায়গায়, যেমন অস্ট্রেলিয়ায়, দেখবেন হাসপাতালের ভেতরেই বার্থিং সেন্টার থাকে। এটা কিন্তু খুব ভালো একটা উপায় – একদিকে যেমন ঘরোয়া পরিবেশ পাওয়া যায়, তেমনই দরকার পড়লে হাসপাতালের সুবিধাও পাওয়া যায়। তবে, খেয়াল রাখবেন এখানেও কিন্তু সবসময় হাসপাতালের মতো কিছু জিনিস, যেমন মেমব্রেন রাপচারিং, করার সম্ভাবনা থাকে। এমনও হতে পারে, বেশি ভিড় হলে আপনাকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে সরিয়ে দেওয়া হল।

৩. আগে থেকে যা যা জেনে নিতে হবে: ঘুরে দেখা ও খুঁটিয়ে প্রশ্ন করা

শুধু ওয়েবসাইট দেখেই বার্থিং সেন্টার পছন্দ করবেন না! যেগুলোতে আপনার আগ্রহ আছে, সেগুলো ঘুরে আসুন।

৩.১ লাইসেন্স ও স্বীকৃতি:

দেখে নিন সেন্টারটির সরকারের লাইসেন্স আছে কিনা। এতে বোঝা যায় তারা নিয়ম মেনে চলে। আমেরিকার (US) মতো জায়গায়, কমিশন ফর দ্য অ্যাক্রেডিটেশন অফ বার্থিং সেন্টার্স (Commission for the Accreditation of Birthing Centers - CABC) থেকে স্বীকৃতি আছে কিনা দেখুন। এর মানে হল তারা জন্মের ফল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এমনকি হট টাবের জলের মানও ঠিক রাখে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন আছে কিনা, তা দেখে নিতে পারেন।

৩.২ পরিবেশটা কেমন দেখুন:

জায়গাটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে তো? সেখানকার লোকজন কি আপনার প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে দিচ্ছে? এমন একটা পরিবেশ খুঁজুন যেখানে আপনি ভরসা করতে পারেন এবং শান্ত থাকতে পারেন। সেখানকার কর্মী, যেমন ধাত্রী (midwife) বা নার্সদের (nurse) ব্যবহার কেমন, সেটাও খেয়াল করুন। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে তারা প্রস্তুত কিনা, তা দেখে নিন।

৪. নিজের মনের কথা শুনুন: আরাম বোধ করাটা জরুরি

সবকিছু যাচাই করার পর, নিজের মনের কথা শুনুন।

৪.১ জায়গাটা কেমন লাগছে:

বার্থিং সেন্টারটি আপনার ভালো লাগছে তো? ঘরোয়া পরিবেশ, ঝর্ণার (Whirlpool) সুবিধা, বা ভেতরের সাজসজ্জা – এসব আপনার পছন্দ হচ্ছে তো? আপনার রুচি ও চাহিদার সাথে জায়গাটির মিল আছে কিনা, তা দেখুন।

৪.২ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলুন:

ধাত্রী ও নার্সদের সাথে কথা বলে দেখুন আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন কিনা। এটা খুব ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার, তাই যারা আপনার যত্ন নেবেন তাদের সাথে আপনার ভালো সম্পর্ক থাকাটা খুব দরকার। পারলে, যখন ডেলিভারি চলছে তখন একবার গিয়ে দেখুন পরিবেশটা কেমন থাকে।

৫. ডেলিভারির পরের পরিকল্পনা: কতদিন থাকবেন ও কারা দেখা করতে আসবেন

এই বিষয়গুলোও কিন্তু খুব জরুরি!

৫.১ ডেলিভারির পরের যত্ন:

ডেলিভারির পর সাধারণত কতদিন থাকতে হয়, জেনে নিন। এটা একেক জায়গায় একেকরকম হয়। কিছু সেন্টার তাড়াতাড়ি ছেড়ে যেতে বলে (কয়েক ঘণ্টার মধ্যে), আবার কিছু জায়গায় বেশিদিন থাকার সুযোগ দেয়। আপনার কী কী সুবিধা দরকার, সেটা ভেবে আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিন। বাড়িতে কে আপনার দেখাশোনা করবে, সেটাও ভেবে রাখা ভালো। নবজাতকের যত্ন ও মায়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাদের কি পরামর্শ, তা জেনে নিন।

৫.২ দেখা করার নিয়ম:

কারা কখন দেখা করতে আসতে পারবে, তা আগে থেকে জেনে নিন। কোথাও খুব কড়াকড়ি নিয়ম থাকে, আবার কোথাও তেমন থাকে না। নিয়মগুলো জানলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়। মনে রাখবেন, বার্থিং সেন্টারের পরিবেশটা কিন্তু হাসপাতালের চেয়ে অনেক বেশি শান্ত থাকে, তাই বেশি লোকজনের আনাগোনা এখানে ভালো নাও লাগতে পারে। দেখা করতে আসার নির্দিষ্ট সময় আছে কিনা এবং সেখানে শিশুদের প্রবেশাধিকার আছে কিনা, তাও জেনে নিন।

৬. কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রেগনেন্সি হওয়া দরকার

সোজাসুজি বললে, যাদের প্রেগন্যান্সিতে বেশি ঝুঁকি আছে, তাদের জন্য বার্থিং সেন্টার ঠিক নয়। ভালো বার্থিং সেন্টারগুলো আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখবে আপনার কোনো ঝুঁকি আছে কিনা। এমনকি, প্রেগন্যান্সির সময় যদি কোনো ঝুঁকি দেখা দেয়, তাহলে তারা আপনাকে অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে। সবসময় নিজের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন। বার্থিং সেন্টারে যাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

৭. তাড়াতাড়ি বুক করুন!

ভালো বার্থিং সেন্টারগুলোতে অনেক আগে থেকে বুকিং হয়ে যায়, এমনকি কয়েক মাস আগে থেকেও! তাই দেরি না করে ঘুরে আসুন আর বুক করে ফেলুন, বিশেষ করে যদি আপনার পছন্দের কোনো ধাত্রী থাকে।

কোথায় আপনার বাচ্চা হবে, এটা খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত, আর আমি আশা করি এই আলোচনা আপনাকে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, এমন একটা পরিবেশ খুঁজে বের করাই আসল, যেখানে আপনি নিরাপদে ও ভালোভাবে আপনার সন্তানকে জন্ম দিতে পারবেন। শুভ কামনা!